শরীরের অত্যাবশ্যকীয় হরমোন থাইরক্সিন যদি কোনো কারণে বেশি বেশি তৈরি হয় বা রক্তে বেশি পরিমাণ থাকে তখন এক ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে, সেগুলোকে হাইপার থাইরয়েডিজম বা থাইরোটক্সিকসিস বলে। হাইপার থাইরয়েডিজম ও থাইরোটক্সিকসিস প্রায় একই ধরনের রোগ। যখন শুধু থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত হরমোন তৈরির কারণে রোগটি হয় তখন তাকে হাইপার থাইরয়েডিজম বলে। আর যখন থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়াও অন্য কারণেও এ হরমোন বেশি রক্তে বা টিস্যুতে থাকে এবং উপসর্গ তৈরি করে তখন এসবকে থাইরোটক্সিকসিস বলে।
হাইপার থাইরয়েডিজম বা থাইরোটক্সিকসিসে প্রথম অবস্থায় কোনো প্রকার উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এ রোগে শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি সিসটেমকে আক্রান্ত করতে পারে। দেখা যায় এ হরমোনের আধিক্যের জন্য হৃৎপিণ্ডে অতিরিক্ত কাজ বেড়ে গিয়ে বুক ধড়ফড় করে। ফলে রোগী অনেক সময় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। এ ধরনের রোগীর পেটের বা অন্ত্রের বেশি বেশি মুভমেন্ট হওয়ার জন্য ঘন ঘন পায়খানা হয় এবং রোগী আন্ত্রিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে পারেন। আবার অনেক সময় ত্বকের সমস্যার কারণে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে পারেন। অনিদ্রা, অস্থিরতা, দুঃশ্চিন্তার জন্য রোগী আবার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও যেতে পারেন। এভাবে সত্যিকারের রোগ নির্ণয় বিলম্বিত হতে পারে। এভাবে অনেক উপসর্গ নিয়ে হাইপার থাইরয়েডিজম দেখা দিতে পারে। ওপরে বর্ণিত সমস্যা ছাড়াও মেয়েদের মাসিক কম হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যত্ব, এবরোশন, পুরুষের বন্ধ্যত্ব, যৌন ক্ষমতা হ্রাস বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের রোগীরা গরম সহ্য করতে পারেন না বলে তারা সব সময় শীত পছন্দ করেন। এসব উপসর্গ ছাড়াও রোগীর গলায় থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যেতে পারে। চোখগুলো বড় বড় দেখা যায়। এ রোগের জটিলতা হিসেবে হার্টফেউলিউর, থাইরয়েডস্ট্রম ইত্যাদি হতে পারে। বিনা চিকিৎসায় থাকলে রোগীর হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ আরও অন্যান্য জটিল রোগের প্রবণতা বেড়ে যায়।
জটিলতা, অবস্থান ইত্যাদি লক্ষণ রেখে তিনভাবে রোগের চিকিৎসা করা হয়_ ১. ওষুধের মাধ্যমে, ২. রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি এবং ৩. সার্জিক্যাল বা শৈল চিকিৎসার মাধ্যমে। এ রোগের অবস্থান প্রাথমিকভাবে ধরতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে কর্ম জীবনযাপন করতে পারেন।