হোমিওপ্যাথিকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ বা সামগ্রিক (holistic) চিকিৎসা বিজ্ঞান অথবা মনো-দৈহিক গঠনগত (constitutional) চিকিৎসা বিজ্ঞান। অর্থাৎ এতে কেবল রোগকে টার্গেট করে চিকিৎসা করা হয় না বরং সাথে সাথে রোগীকেও টার্গেট করে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর শারীরিক এবং মানসিক গঠনে কি কি ত্রুটি আছে, সেগুলোকে একজন হোমিও চিকিৎসক খুঁজে বের করে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করেন। রোগটা কি জানার পাশাপাশি তিনি রোগীর মন-মানসিকতা কেমন, রোগীর আবেগ-অনুভূতি কেমন, রোগীর পছন্দ-অপছন্দ কেমন, রোগী কি কি জিনিসকে ভয় পায়, কি ধরণের স্বপ্ন দেখে, ঘামায় কেমন, ঘুম কেমন, পায়খানা-প্রস্রাব কেমন, পেশা কি, কি কি রোগ সাধারণত বেশী বেশী হয়, অতীতে কি কি রোগ হয়েছিল, বংশে কি কি রোগ বেশী দেখা যায়, রোগীর মনের ওপর দিয়ে কি কি ঝড় বয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি জেনে রোগীর ব্যক্তিত্ব (individuality) বুঝার চেষ্টা করেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করেন। এই কারণে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এমন রোগও খুব সহজে সেরে যায়, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কল্পনাও করা যায় না।
একজন হোমিও চিকিৎসক রোগীর শারীরিক কষ্টের চাইতে বেশী গুরুত্ব দেন রোগীর মানসিক অবস্থাকে। কেননা হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, অধিকাংশ জটিল রোগের সূচনা হয় মানসিক আঘাত (mental shock) কিংবা মানসিক অস্থিরতা/উৎকন্ঠা/দুঃশ্চিন্তা (anxiety) থেকে। মোটকথা মারাত্মক রোগের প্রথম শুরুটা হয় মনে এবং পরে তা ধীরে ধীরে শরীরে প্রকাশ পায়। এজন্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মনই হলো আসল মানুষটা (mind is the man)। তাছাড়া পৃথিবীতে হোমিও ঔষধই একমাত্র ঔষধ যাকে মানুষের শরীর ও মনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই কারণে হোমিও ঔষধ মানুষের শরীর ও মনকে যতটা বুঝতে পারে, অন্য কোন ঔষধের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
হোমিওপ্যাথি কেবল রোগের নয়, সাথে সাথে রোগীরও চিকিৎসা করে থাকে। হোমিও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া এতই কম যে, নাই বললেই চলে। এন্টিবায়োটিকের মতো ইহারা ব্রেনের, হজম শক্তির কিংবা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির (immune system) ক্ষতি করে না। হোমিওপ্যাথিতে পচানব্বই ভাগ অপারেশনের কেইস শুধু ঔষধেই সারিয়ে তোলা যায়। প্রচলিত সকল চিকিৎসা শাস্ত্রে যাদের পড়াশুনা আছে, তারা দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করেন যে, হোমিওপ্যাথি রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। হোমিওপ্যাথি মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তু, বৃক্ষতরুলতা সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে কাযর্কর এবং নিরাপদ। হোমিওপ্যাথিতে রোগের সঠিক মূল কারণটিকে দূর করার চিকিৎসা দেওয়া হয়। হোমিও ঔষধ প্রয়োগ করা হয় খুবই অল্প মাত্রায় যা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে রোগ নিরাময় করে।