আমরা যখন পানি খাই তখন তা কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বের হয়ে যায়। মানুষের শরীরের দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। আর এই মুত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি বা মূত্রথলি অথবা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। এই ইনফেকশনকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। সাধারণত এই সমস্যাটি নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যে হলেও নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ইউরিন ইনফেকশন হলে যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় সেগুলো হলো- প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে হওয়া প্রস্রাবে বাজে গন্ধ একটু পর পর প্রস্রাব লাগা কিন্তু ঠিক মতো না হওয়া প্রস্রাব করার সময় জ্বালা পোড়া বা ব্যথা করা তলপেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া বমি ভাব বা বমি হওয়া ইউরিন ইনফেকশনের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে যেগুলো মেনে চললে নিস্তার পাওয়া সম্ভব এই সমস্যা থেকে। আসুন জেনে নেয়া যাক ইউরিন ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার গুলো সম্পর্কে।
টমাস এম. হুটন বলেন
ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি’র সংক্রমণ রোগ বিভাগের রোগশয্যা পরিচালক ও গবেষণার প্রধান লেখক টমাস এম. হুটন বলেন, “এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে, বিরক্তিকর সংক্রমণ ও এর অস্বস্তি দূর করার সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায় হল পানি পান। গবেষণা থেকে জানা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীদের মূত্রনালী ছোট এবং এটা মূত্রনালী ও মূত্রাশয় বিশিষ্ট একটি ‘টিউব’। এর মধ্য দিয়ে শরীরের তরল বর্জ্য অপসারিত হয়। তাই ব্যাক্টেরিয়া মলনালী থেকে যোনিপথে ছড়ায় যা নারীদের মূত্রাশয়ের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
গবেষকরা জানান
গবেষকরা জানান, অতিরিক্ত তরল পান করা হলে তা শরীর থেকে ব্যাক্টেরিয়া বের করে দিতে সাহায্য করে এবং যোনি থেকে মুত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের হার কমায়। এতে মুত্রনালীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোষে ব্যাক্টেরিয়া ছড়িয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে। গবেষকরা ‘প্রি-মেনোপোজাল’ বা রজোনিবৃত্তির পথে বা যাদের সবে রজোবন্ধ হয়েছে এরকম ১৪০ জন সুস্থ নারীর উপর জরিপ চালান।
ফলাফল
ফলাফলে দেখা গেছে, যেসব নারী তাদের পানি পান করার পরিমাণ বৃদ্ধি করেন তারা গড়ে ১.৬ বার মূত্রনালীর সংক্রমণের শিকার হন। অন্যদিকে, যারা কম পানি পান করেরন তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩.১ গুণ বেশি। হুটন বলেন, যদি কোনো নারী পুনরায় মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে চান তাহলে তাকে পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
প্রচুর পানি খাওয়া
ইউরিন ইনফেকশন হলে কিংবা ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা থাকলে প্রতিদিন কম পক্ষে ৮ আউন্স পানি খাওয়া উচিত। কিছুক্ষন পর পর এক গ্লাস করে পানি খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরিন ইনফেকশন ভালো করে ফেলা যায়। বিশেষ করে প্রসাবে হলুদ ভাব দেখা গেলেই দেরি না করে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া শুরু করা উচিত। আর যাদের প্রায়ই এই সমস্যা হয় তাঁরা সব সময়েই একটু বেশি পানি খাওয়ার অভ্যাস করবেন। সাধারণত প্রতি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া উচিত। প্রস্রাব হতে এর চাইতে বেশি দেরি হলে বার বার পানি খেতে থাকুন। বাসার বাইরে গেলেও সব সময় পানি রাখুন সাথে।
ভিটামিন সি
ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেক ডাক্তারই রোগীদেরকে দৈনিক ৫০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন সি মুত্রথলীকে ভালো রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
আনারস
আনারসে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপকারী এঞ্জাইম। গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় এবং তা ইউরিন ইনফেকশন ভালো করে দেয় খুব দ্রুত। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস খান।
বেকিং সোডা
ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত দুই দিনের বেশি সময় থাকে। আর এই সময়ে ইনফেকশন কিডনিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে ফেলা উচিত। বেকিং সোড়া দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ১/২ চা চামচ বেকিং পাউডার এক কাপ পানিতে ভালো করে মিশিয়ে দিনে একবার করে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে এবং ইউরিন ইনফেকশন দ্রুত ভালো হয়।